Thursday, November 19, 2009

শিকার [ (প্রায়) থ্রিলার ]

বাস জার্নি জিনিসটাই বোরিং । আমার মত অসামাজিক টাইপ মানুষদের জন্য তো অবশ্যই । 
গান শোনো আর ঘুমাও । বাস এ পাশের যাত্রী যদি হয় বাঁচাল,তাহলে তো কথাই নেই । কেউ কেউ 
আবার ঘুমের মধ্যে গায়ের উপর ঢলে পড়ে! অসহ্য! 



ইদানিং আবার মলম পার্টি নামে কিছু বিশ্রি চোরের আবির্ভাব হয়েছে । বাস যাত্রা এখন আর নিরাপদ নয় :। 
আমি চট্টগ্রাম এর বাস এ উঠেছি ঢাকা আসার জন্য । বাস কিছুক্ষণের মধ্যে ছাড়বে । 
এখন বাজছে ১১ টা পঞ্চাশ । রোজার দিন ধীরে যায় । রাত খুব তাড়াতাড়ি চলে যায় । অনেকক্ষণ ধরেই বসে আছি । 
আজকের রাত অত দ্রুত কাটছে না । নিজের পছন্দমত একটা সিট নিয়েছিলাম । 
ভাগ্য ভাল !আমার পাশের সিট এ কেউ এখনো বসে নাই । ভাল। না বসলেই ভাল । 
আমার সাথে একটা ফুটবল । (যদিও আমি ফুটবল খেলি না । একটা সময় দেখতাম খুব। 
ক্লাব ফুটবল নিয়ে আড্ডাও দিতাম বন্ধুরা মিলে। )আর আছে আমার ব্যাগটা। 
ব্যাগ ভর্তি জিনিস পত্র । আর সাথে বেশ কিছু টাকা । ভালোয় ভালোয় ঢাকা গেলে বাঁচি । ঢাকায় গিয়েই...
চিন্তায় ছেদ পড়ল । এক জন বেঁটে খাঁটো লোক আমার পাশের সিট এ বসার জন্য এল। আমি আবার জানালার পাশে বসি না । 
লোকটার জন্য আমার ফুটবলটা কোলে নিয়ে জায়গা করে দিলাম। লোকটা জানালার পাশের সিটে গিয়ে বসল। 
মেজাজটাই গরম হয়ে গেল । ডিসগাস্টিং !একে দেখেই মলম পার্টিবলে মনে হয়!লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করল । 
আমি ভদ্রতা রক্ষা করলাম না । হাসির উত্তর না দিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম । লোকটি অপমানিত হয়েছে কিনা জানি না । হলেই ভাল । আর কথা বলবে না ! 
লোকটি একটু ঢেলান দিয়ে বসল । বসেই জানালাটা লাগিয়ে দিল!
আমার জানালার পাশে বসায় সমস্যা হয় । কিন্তু তাই বলে লোকটা জানালাটা বন্ধ করে দেবে?!
ডিসগাস্টিং ! 
বাস ছেড়ে দিল । বাস ধীর গতিতে এগুতে লাগল । রিক্সাগুলো ও যে! কোন নিয়ম মানে না !জ্যাম লাগিয়ে রাখে!
চট্টগ্রামের এই রোডগুলায় এত বেশি ট্রাক! রাতের বেলায় ও জ্যাম হয়। জ্যাম একদম ভাল লাগে না । ইদানিং অবশ্য কিছুই ভাল লাগে না ! 
বেশ কিছুটা সময় পরে বাস গতি পেল । এখন বেশ টান মেরে চলবে । 



লোক টা কথা বলার জন্য বেশ উশ খুশ করছে বোঝাই যাচ্ছে ! আমি মুখ ও ফিরালাম না তার দিকে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে লাগলাম । অনেকক্ষণ কেটে গেল । 
পাশের লোকটি তার হাতে রাখা ছোট ব্যাগ থেকে একটা খেজুঁর এর প্যাকেট বের করল। রমজান মাসে খেজুর 
খাওয়াটা স্বাভাবিক । তাই বলে শুধু খেজুঁর ?! সে প্যাকেট থেকে বের করে গাপাগাপ খেতে লাগল ! যেন এগুলা মুড়ি :P!
দুটো আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন ভাইজান খাবেন নাকি? আমি ইচ্ছে করে মুখে বিরক্তির চিহ্ন ফুটিয়ে তুললাম ।
লোকটা মনে হয় বুঝতে পারল । 
"ওকে ভাইজান! অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে বাস এ কিছু না খাওয়াটাই উচিত। তাই বলে আমরা সামাজিক মানুষ । 
কিছু সাধা সাধি না করলে চলে?সামনেই তো বাস থামবে । ঐ খানের হোটেল থেকে কিছু খেয়ে নিতে পারবেন । " এক টানে কথা গুলো বলে গেল । এর পর খ্যক খ্যাক করে হাসতে লাগল । 
আমি যেন জানি না আর! এই সব লোক কেন যে এত কথা বলে! 
"ইদানিং আবার বিশাল সমস্যা শুরু হইছে!" এ তো দেখি মহা যন্ত্রণা এই লোকের থামার কোন লক্ষণ নাই ! 
আমি এই বার অবশ্য একটু ভদ্রতা করলাম । "কি সমস্যা?" 
"ইদানিং এক টাইপের ডাকাইত বাস আক্রমণ করতাছে!" 
"কি টাইপ?" আমিও অবশ্য কিছু কিছু শুনেছি পুরোটা জানার দরকার আছে। এই সব বাচাঁলরা এইগুলা আবার ভালো জানে । যদিও যা বলে তার
অনেকাংশই বানোয়াট । তবে শুনে রাখা ভাল । 
"এরা ড্রাইবারের সাথে চুক্তি কইরা রাখে! একটু সুনসান জায়গা দেইখা বাস "সোলো" করে । এর পর ডাকাইতরা উঠে । 
কালা কাপড়ে মুখ ঢাকা ডাকাইত। ভাব দেখায় ড্রাইবারগো লগে কোন কিস্যু নাই! আসলে অরাই নাটের গুরু । এর পর তো সব নিয়া যায় । চোখে ..."
"ব্যস ব্যস! আর বলতে হবে না । বুঝতে পেরেছি । "গপ্পো মারার আর জায়গা পায় না! তবে কাছা কাছি কিছু একটা আমিও শুনেছি । 
"আসলেই ডরের কথা ।" এই বলে সে পেয়ারা বের করল । খেজুর অলরেডি শেষ করে ফেলেছে । "ভাইজান পেয়ারা খাইবেন ? আমার মায় দিছে!" 
"না ভাই । কিছু মনে করবেন না ।" এই বলে আমি আমার ব্যাগে রাখা জুসের বোতলটা বের করলাম । "যেই কথা বললেন গলা শুকায়া গেছে! "
লোকটা হে হে করে হাসল । "খেজুর খায়া আমার গলাডাও শুকায়া গেছে । একটু দিবেন নাকি?" 
আমি দিলাম । এতই যখন পরোপকারী স্বভাব তার! "দুই ঢোক ভাই । আমি বাইরের জিনিস খাই না তো! এই জুসটাই ভরসা " 
"আইচ্ছা আইচ্ছা!" লোকটা এই বলে একটু হেসে বোতলটা নিয়ে খাওয়া শুরু করল । দুই ঢোক ই খেল সে! তবে বেশ বড় বড় ঢোক! 
"ধন্যবাদ ভাই ।"
"ওয়েলকাম " বলে আমি মুখটা আটকালাম । নিজে খেলাম না । 
লোকটা বলল "পেয়ারাটা নিতে পারতেন ভাই । শুধুই একটা ফল ।" বলে একটু হাসল । "আমি অবশ্য খাই না " । 
আমি আবারো বললাম "না ভাই!অনেক ধন্যবাদ!" 
লোকটা জানালার দিকে তাকানো শুরু করল । এর পর বলল "কী ব্যাপার! এত ঘুম ধরল হঠাত কইরা?!!"
আমি একটু মুচকি হাসলাম । লোকটি বুঝতে পেরেছে কি ঘটেছে! সে কিছু বলার আগেই ঢলে পড়ল । 
আমি অন্য যাত্রীদের দিকে তাকালাম কেউ খেয়াল করল কিনা । সবাই ঘুমে ঢলে পড়ছে অথবা গান শুনছে চোখ বন্ধ করে ।
তার পর লোকটার ছোট ব্যাগটি চেক করা শুরু করলাম । 
ভেতরে দেখি অনেক মানিব্যাগ! এই লোক দেখি আমার মতই "শিকারী"!! 
এর পেয়ারায় শিওর ঘুমের ঔষধ মেশানো আছে ! যাই হোক চট্টগ্রাম আসার সময় ও দান মারলাম আমি । যাবার সময় ও! তাও আবার চোরের উপর বাটপারী! ফুটবল টা পায়ের কাছে ছিল লাথি মেরে ভেতরের দিকে ঠেলে দিলাম । আগের "শিকার"এর ফুটবল ছিল এটা । 
ছেলেটার জন্য একটু আফসোস হইছিল পরে । কিন্তু এইবার খুব ভালো লাগছে! গর্বে আমার বুক ফুলে যাচ্ছে । সব রুল ফলো করে "শিকার" করেছি । জানালার পাশে বসা যাবে না । রাস্তার শুরুতেই কিছু খেতে সাধা যাবে না । সাথে এমন কিছু রাখতে হবে যাতে দেখে নির্দোষ মনে হয় (যেমন ফুটবল!)। মাঝপথে সবাই যখন ঘুমে ব্যস্ত তখন ই কাজ করতে হবে!আমি তো বস ! ভাবতে লাগলাম । 
মানিব্যাগ গুলো থেকে টাকা বের করে আমার ব্যাগে ঢুকাচ্ছিলাম । হঠাৎ মনে হল গাড়ি স্লো হয়ে গেছে । সামনের দরজা দিয়ে কেউ ঢুকল বলে 
মনে হল! লাইট নেভানো ছিল । তবুও বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল না লোক গুলোর মুখে মুখোশ ছিল । মুখোশটা কি কালো? 

3 comments:

Unknown said...

হাহা..
শেষটুকু পড়ে মজা পাইলাম।

বোহেমিয়ান said...

ধন্যবাদ!

Anonymous said...

হাহাহা।।খুব ই মজার!