Friday, October 22, 2010

[ সঙবাদ বিশ্লেষণ ১] প্রেমিকা নাকি তরুণী নাকি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খুন?

আমাদের মিডিয়া সংবাদ উপস্থাপনে কতটা সতর্ক? তাঁরা সংবাদ উপস্থাপন করার সময় কতটুকু সচেতন থাকেন? এবং যে সব তথ্য তাঁরা প্রকাশ করেন তা কতটুকু সঠিক? 
গতকাল চট্রগ্রামে এক তরুণী খুন হয়েছেন। সেই খুনের খবর আমাদের দেশের বিশ্বাসযোগ্য, সচেতন গণমাধ্যম কীভাবে উপস্থাপন করেছে তা নিয়েই মূলত এই লেখা। 


ডেইলিস্টার 

বিডিনিউজ২৪

কালের কণ্ঠ 

সমকাল 

প্রথম আলো

পেশাদারী ঔৎকর্ষের শীর্ষে অবস্থানকারী প্রথম আলোর শিরোনামের দিকে লক্ষ্য করুন প্রিয় পাঠক, একজন ছাত্রী খুন হয়েছেন, এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি হবার সাথে সম্পর্ক কোথায়? 
লক্ষ্য করুন বিডিনিউজের শিরোনাম, প্রেমিকা খুন শিরোনাম হিসেবে দিলে হয়ত ক্লিক একটু বেশিই পড়ে! 

নিহত ছাত্রীর নাম ঃ
সমকাল ->সারিনা রহমান মেধা
প্রথম আলো-> মৃদাট সারিমা রহমান
Daily Star -> Mridhat Sarima Rahman
বাকিরা মেয়েটির নাম লিখেছে সারিমা রহমান।

সমকালের মত দেশের জাতীয় দৈনিক, সামান্য একটা নাম ছাপাতেও ভুল করে! 

ডেইলি স্টার লিখেছে 
Sources said Mridhat was involved in an affair with Sourav of Bayezid area for around eight years until she broke up with him six months ago

প্রথম আলো লিখেছে
আটক সাফাত দাবি করেছেন, এস এম তোহা ওরফে সৌরভ নামের এক যুবকের সঙ্গে সারিমার সাত বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ওই সম্পর্ক ছিন্ন করতে তাঁরা তাঁর বাসায় এসেছিলেন এবং কথা বলার একপর্যায়ে তোহা সারিমাকে ছুরিকাঘাত করেন।


ট্রান্সকমের মালিকানাধীন ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো দুইজন দুই রকম তথ্য উপস্থাপন করছে! একজন লিখেছে, ৮ আরেকজন ৭! আপনি কোনটা বিশ্বাস করবেন? একজন লিখেছে, ৬ মাস আগে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে, আরেকজন লিখেছে, সেই সম্পর্ক ছিন্ন করতে দেখা করতে এসেছে! 

কালের কণ্ঠ ছাড়া একটি পত্রিকাও লিখল না, মেয়েটির পরিবারের এই বিষয়ে কিছু বলার আছে কীনা!  
কালের কণ্ঠ লিখেছে 
তবে মেধার পরিবার বলছে, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সৌরভ মেধাকে হত্যা করতে পারে।

হায়রে বাংলাদেশের পত্রিকা! একটা সামান্য সংবাদ, তাও সব খোঁজ খবর না নিয়ে প্রকাশ করা! এই খবরের ক্ষেত্রে দু পক্ষের সংবাদ প্রচার করা উচিত ছিলো নাকি?

ছোট্ একটা খবরের ক্ষেত্রেই তাঁরা সকল পক্ষের বক্তব্য দেন না,  বড় খবরের ক্ষেত্রে কি হয়?!!



বিডিনিউজ মেয়েটি যে বাসায় খুন হয়েছে তার বাড়ির ঠিকানাও তুলে দিয়েছে!  

প্রথম আলো এবং Daily Star মেয়েটির ছবি ছাপিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে মেয়েটির ছবি দরকার কি ছিলো? এ ক্ষেত্রে পেশাদারী মনোভাবের পরিচয় কীভাবে প্রকাশ পায়? 

প্রাইভেসীর দিকে আমাদের সাংবাদিকরা কি একটূও নজর দেবেন না?

প্রথম আলোতে এসেছে 
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (উত্তর) উপকমিশনার আমেনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, পুরোনো সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলে সারিমা ও তোহা আমীরবাগের ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন। আমরা এই বক্তব্য যাচাই করে দেখছি। পাশাপাশি তোহাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। তোহা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে মন্তব্য করা উচিত হবে না।’

কিন্তু মিডিয়া কিন্তু সরাসরি শিরোনামেই লিখে দিয়েছে! 

এবারে পাঠক আপনাদের কাছে কিছু প্রশ্ন ঃ
এই মেয়েটির পরিবার এর অবস্থা ভাবুন তো! সেই পরিবারের একটি মেয়ে, যার ছবিও ছাপা হয়েছে, ছাপা হয়েছে বাবার নাম, মার নাম, বাসা কোথায় তাও- পত্রিকায় খবরের শিরোনাম শুধু নিহত হিসেবেই আসে নি, এসেছে মুখরোচক খবরের শিরোনাম হিসেবে। 

আমরা সেই পরিবারের কথা ভেবে দেখেছি কি কখনো? যারা মাত্রই তাঁদের প্রিয় একজনকে হারালেন? সাথে সাথে ফ্রি হিসেবে পাচ্ছেন "পেশাদার" সাংবাদিকদের অত্যাচার? তাঁরা শোক পালন করবেন নাকি মিডিয়ার কারণে যে অযাচিত ঝামেলার উদ্ভব হচ্ছে/হবে তা সামলাবেন?  

এই লেখাটি খুব সামান্য একটি বিষয়কে নিয়ে, প্রিয় পাঠক, আমার লক্ষ্য ছিলো, একটি বিষয়কে দেখানো,  আমাদের মিডিয়া সংবাদ অনুসন্ধানে কতটা তৎপর এবং তা উপস্থাপনে কতটা সচেতন! 
একটা সামান্য ঘটনা, তথ্য সংগ্রহ করা সহজ, এবং উপস্থাপনাও কঠিন কিছু নয়। তাতেই যখন আমাদের সাংবাদিকরা ব্যর্থ হন, বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ক্ষেত্রে কী হয় আসলে? 

এবং একটি কৌতুক, আজ সমকালে একটি খবরের শিরোনাম 
সাংবাদিকের দায়বদ্ধতা শুধু জনগণের কাছে। সাংবাদিকদের দায়বদ্ধতা দেখে কি আপনার হাসি পায় না?! আমার কিন্তু পায় না :( 






পাঠক- ভাই, ভুল খবর ছাপাইছেন!
সম্পাদক- খবর যে ছাপাইছি এইটাই তো বেশি!

5 comments:

Unknown said...

এই মেয়ের কাজিন আছে সামুতে, তবে স্বাভাবিক ভাবেই তেমন কোন সম্পর্ক মৃতা ও খুনীর মাঝে থাকলেও চেপে যেতে পারে। কেউই চায় না কিছু রটুক।
http://www.somewhereinblog.net/blog/odrissoami/29259297

এখনকার সংবাদ মানেই যেটা আপনাকে হিট/কাটতি দেবে সেইটা মশলা দিয়ে প্রচার। সব পক্ষের কথা দিলে সেইটা থাকবে না।

গতকালই সামুতে দেখলাম, আঃলীগের পিটুনিতে মৃত মানুষটার দুটো বাচ্চাকে রীতিমতো আয়োজন করে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে তাদের বাবা হ্যতায় নৃশংস ভিডিওটি দেখিয়েছে, কি অবস্থা! বলবার ভাষা পাই না।

এই বছরেই তো এটা খুব সম্ভবত চতূর্থ ঘটনা যেটা মিডিয়াতে এলো।

মানসিক বিকার ছাড়া কিছু বলতে পারছি না। সম্পর্ক ভাঙা অবশ্যই কষ্টায়ক, তবে কেউ খুনি হয়ে গেলে সেখানে আর কিছু বলার খুঁজে পাই না। কে চীট আর কে ভুক্তভোগী সেই আলোচনায় আর এগুনো যায় না যখন একটা লাশ পড়ে থাকে অথবা এসিডে ঝলসে যায় মানুষ।

রনি পারভেজ said...

আহারে! আর ধুনাইয়েননা পত্রিকাগুলারে ;)
বেচারারা এমনিতেই বহুত কষ্টে আছে।

iftekhar said...

ভাল লাগলো তোমার লেখা পড়ে...আর খারাপ লাগলো শিরোনাম গুলো পড়ে...

ফাহমি said...

হায় সংবাদপত্র!!

Anonymous said...

দুর্দান্তরে ভাই!
চোউখ খুলনের দরকার মানুষের