Thursday, September 30, 2010

এক হাতে তালি বাজে না [সঙবাদ অনুবাদ ২]


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই দুই পয়সার বোহেমিয়ান এর লেখা আপনার কানে যাবে না, চোখে পড়বে না। তবুও লিখে রাখা। আমি বা আমরা যারা জাতির পিতা কিংবা স্বাধীনতার ঘোষকের  সন্তান/বংশধর নই, আমাদের কথা বলতে চাচ্ছিলাম। সেই আমাদের কথা, যারা বাদুড় ঝোলা হয়ে বাসে ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে আটকে থাকি, (আমাদের ল্যাব শেষ হয়ে যায়, ইন্টারভিউ মিস হয়ে যায়), সেই আমাদের কথা যারা প্রতিনিয়ত উচ্চমূল্যে ভেজাল খেয়ে যাচ্ছি লোডশেডিং এর নোংরা অন্ধকারে, সেই আমাদের কথা, যাদের স্বপ্ন আশা আকাঙ্খার আকাশ নীচে নামতে নামতে মাটির সাথে মিশে গেছে। 


আমি বুয়েটের ছাত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের না , তবু জানি ঢাবিতে সুযোগ পাওয়া কতটা কষ্টের। একজন ছাত্র কতটা শ্রম দিলে, স্বপ্নের পালে কতটা হাওয়া দিলে ঢাবির  বন্দরে পৌছায়। হলের অসাস্থ্যকর খাওয়া খেয়ে, কাছের মানুষদেরকে ছেড়ে ইটের জংগলে এসে ছাড়পোকার কামড় খেয়ে পড়ে যাচ্ছে যারা তাদের কয়েকজনের কথা বলার জন্যই এই লেখা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। 

 প্রধানমন্ত্রী, আমেরিকা থেকে আমাদের জন্য অনেক গর্ব বয়ে নিয়ে আসলেন , আপনার দলের ছাত্র শাখার ছাত্র এবং ছাত্রীরা সব ফেলে ছুটে গেল আপনাকে সংবর্ধনা দিতে। কিছু ছেলে যায় নি। ওদেরকে যেতে বলা হয়েছিলো। তবু যায় নি। কারও কারও পরীক্ষা ছিলো আজ- এই রকম সস্তা অজুহাত মানুষ দেয়?! ইউনিভার্সিটিতে মানুষ কি শুধু পড়তেই আসে? এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস বলে একটা ব্যাপার আছে না?! দেশরত্নের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বলেও তো একটা ব্যাপার আছে। সেই সব ছেলে গুলা এই সব বোঝে নি!
তাই ওদেরকে হল থেকে বের করে দিলো, আপনার সুযোগ্য ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা। 

 বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগে সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ শাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর্মসূচিতে না গেলে তাঁদের হল থেকে বের করে দেবে না তো কী করবে?

এক হাতে তালি বাজে নি, বাজে না। ছেলেগুলোরই ভুল ছিলো, অপরাধ ছিলো। 
খোলা আকাশের নীচে তরুণ ছেলেগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে প্রায়শ্চিত্ত করছিলো, জানেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী?  প্রক্টর কিংবা প্রভোস্ট কেউ আসেন নি তাদের শাস্তির(!!) খবর নিতে! 


কার্জন হলের চত্বরে সেই ছাত্ররা ক্ষোভে অপমানে খোলা আকাশের নীচে মাথা নীচু করে দাড়িয়েছিলো। তাঁরা আকাশ দেখতে ভুলে যায় নি, বুক ভরা ঘৃণা নিয়ে কি আকাশ দেখা যায়?  কতটা ঘৃণা আমাদের বুকে তা কি আমরা নিজেরাও জানি? প্রতিদিন একটু একটু করে আকাশ দেখা ভুলে যাচ্ছি। আকাশ হবার কথা তো ভুলেও আর মুখে আনি না!আমি, আমরা প্রতিদিন শুনি, স্বপ্ন ভাঙার শব্দ। সেই কর্কশ শব্দ কতটা কানে বাজে, বুকে কীভাবে ক্ষতের সৃষ্টি করে তা আমরা দুই পয়সার আম জনতা প্রতিনিয়ত টের পাই। আমাদের শাস্তিভোগের পেছনেও  কারণ আছে নিশ্চয়! এক হাতে কখনোই তালি বাজে না। 


প্রধানমন্ত্রী প্লিজ সময় পেলে আরেকবার সতর্কবাণী দেবেন। আমরা তালি দেব। দু হাত দিয়েই, কারণ আমরা জানি একহাতে তালি বাজে না। 



1 comment:

FaysaL said...

অনেক রসালো অনুবাদ করেছেন....