Thursday, December 23, 2010

না বদলানোর শপথ!

কাল বুয়েট যাচ্ছিলাম। নীলক্ষেত থেকে বুয়েট হেঁটেই যাই। কারণ অযথা বেশি টাকা দিবো ক্যান?! প্লাস হাঁটতে সেই রকম ভালো লাগে আমার!
(নিজের ব্যাপারে বলি বাপ্পি দুনিয়ায় একটা কাজই ভালো পারে, সেটা হচ্ছে হাঁটাহাঁটি!)
যাবার পথের রাস্তাটায় ভাত বিক্রি করে কিছু মহিলা। রিকশাওয়ালা/ভ্যানওয়ালারা সেখানে খায়। খিচুড়িও থাকে দেখেছি। একদিন অন্তত খেয়ে দেখার ইচ্ছে আছে! (বাঙালির একদিনের পান্তার মত!) তো কাল যাবার সময় দেখলাম কয়েকজন মিলে একসাথে ভাত খাচ্ছে।

খুব সাধারণ ঘটনা, কিন্তু আমার চোখ আটকে গেলো তাঁদের মুখ দেখে। কী অদ্ভুদ একটা শান্তির ছোঁয়া, মুখে কী অদ্ভুদ সুখানুভূতির আঁচড়!
আমি থমকে দাঁড়ালাম! কেএফসি/নান্দো'স/হ্যালভেশিয়ায়...নানান পার্টি/গেটটুগেদার এ আমার যে সব ছবি আছে। সে সব ছবিতে কি কখনো এই রকম সুখানুভূতি খুঁজে পাওয়া যাবে?
নিজের কাছে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলাম।
সেই লজ্জা আমার কাটছেই না।
আরও অনেক কিছু মনে পড়ে গেল।
সেদিন বসুন্ধরা থেকে একটা শীতের কাপড় কিনতে গিয়েছিলাম। নামী ব্র্যান্ড,দামী কাপড়।
কাপড়টা একটু ছোট করতে দিয়েছিলাম, তাই ডেলিভারি পরের দিন নিতে হল।
ডেলিভারির দিন আরেকটা নতুন ডিজাইন দেখলাম! কালার বেশ ভালো লেগেছিল।
আমাকে যারা চেনেন তাঁরা নিশ্চয় বলবেন "খাইছে! বাপ্পি কাপড় এর উপর এত ইম্পর্টেন্স কবে থেকে দেয়া শুরু করল?!"
আমি দেই না। কিন্তু সেদিন দিয়েছিলাম। কাপড় চোপড় পেয়ে খুশি অখুশির বয়স প্রায় পার করে ফেলেছি। (নিজেকে বুড়া বলে ফেললাম নাকি?!)
তবুও নিজেকেই নিজে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম, এই কালারটাই ঠিক আছে। ঐটা আসলে ততটা ভালো না।
এই ঘটনা হয়ত ভুলে যেতাম, কিন্তু মনে পড়ল, সেই ভাত খাওয়াত মুখোচ্ছবির কথা মনে করে।
কমিউনিটিঅ্যাকশনের অ্যাকশন উষ্ণতার কথা মনে পড়ল, যারা এই শীতের কাপড় গুলো পাচ্ছে/পাবে ওদের মুখের ছবিটা কেমন ?
বসুন্ধরার ঐ আধুনিক চলন্ত সিঁড়িতে আপাত স্থির আমার মুখের ছবিটা কেমন ছিল সেদিন?
লজ্জা লাগছে। সত্যিই!
babu2.jpg
বাচ্চাকালে শীতের সময় ১৫০ টাকার র‍্যাকেট পেয়ে চিৎকার করে দৌড়েছিলাম, মনে পড়ছে। বছর দুয়েক আগে কেনা ল্যাপটপটা কিনেও কি এত খুশী হয়েছিলাম? মনে পড়ছে না!
নোকিয়ার সেই সময়ের সেরা টাচ ফোন, (এখন অনেক পুরনো হলেও মানুষ চোখ টাটায়!) সেটা কিনেওকতটা আনন্দিত ছিলাম?
হয়ত অনেকেই বলবেন, বয়সের কারণে এমনটা হয়েছে। বদলে গিয়েছি।
কিন্তু আমি তো বদলাতে চাই না।
আমি এখনো প্রিয় কারও কাছ থেকে সামান্য কিছু পেয়ে চিৎকার করতে চাই (যতটা আস্তে/লুকিয়েই হোক না কেন!)।
আমি খুব সামান্য কিছু অর্জন নিয়েও ভরিয়ে ফেলতে চাই আমার গোপন ডায়রির পাতা গুলো!
মুখে ফুটিয়ে তুলতে চাই ছেলেমানুষি আনন্দের রেখাগুলো।
অনুমেয়, সাধারণ, টিপিক্যাল আনন্দের বহিঃপ্রকাশ বরাদ্দ থাকুক বোরিং লোকদের জন্য!
আমার জন্য না!
me3.jpg
সবার জন্য শুভকামনা।

5 comments:

Anonymous said...

বাপ্পি ভাই, ২ নাম্বার ছবিটায় সবার উপরেকি আপনি? দারুন পজ।

বোহেমিয়ান said...

হ্যাঁ ভাই আমি! ধন্যবাদ!

যাযাবর said...

অনেকদিন পর একটা লেখা পড়ে নিজের কথা ভাবতে বসলাম। অজান্তেই কেমন যেন বদলে যাচ্ছি। সত্যিইতো, সামান্য কিছু পেলেই কী ভীষণ আনন্দ হতো একসময়। আর সে আনন্দ প্রকাশেও কতটা সততা ছিলো!! কেনো যে বদলাচ্ছি?!

foortibajanu said...

আসলেই,আমার ও এইকথাগুলি মনে হয়
ধন্যবাদ!মনের কথাগুলি ভাগাভাগি করার জন্য

আলিম আল রাজি said...

ইয়াহু!!!!!!!!!