Wednesday, July 7, 2010

শেখ হামদু জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদ

এই লেখার প্রতিটি চরিত্র, স্থান, নাম , প্রতিষ্ঠান , তথ্য-পরিসংখ্যান সব কিছুই কাল্পনিক/মন গড়া । বাস্তবের সাথে মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র।


'অন্যরাজ্যে'র রাজা শেখ হামদু জিয়ার বেশ বড়সড় উপদেষ্টা পরিষদ আছে। 'অন্যরাজ্য' শাসন এর জন্য এই বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর উপর রাজাকে নির্ভর করতে হয়। উপদেষ্টাদের মধ্যে নানা মতপার্থক্য আছে, নানা দল আছে। লাল,নীল,বেগুনী ...।




রাজা হামদু সব পক্ষের কথাই শুনতেন ,তারপর যেটা তার কাছে মনে হত ভালো সেই কাজ করতেন। কিন্তু দিনকে দিন মত পার্থক্য বেড়েই যাচ্ছিল। মতপার্থক্যের কারণে রাজার সিদ্ধান্ত নিতে বেশ সমস্যা হত। একদল বলত ডানে যেত, আরেক দল বামে , অন্য একটি দল বলত উপরে যেতে! এমনি করে সমস্যা বেড়েই চলেছিলো। রাজা হামদু ভাবলেন এদের মধ্যে দূরত্ব কমানো দরকার। কিন্তু এরা তো নিজেদের মধ্যে কোন আলাপ আলোচনা করবে না। তো কী করা যায়?

তিনি এদেরকে একসাথে ভ্রমণে পাঠানোর পরিকল্পনা করলেন। এদেরকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে আসতে বললেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেই সব বুদ্ধিজীবীদের একটি গ্রুপ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়লেন। তাদের সাথে একজন গাইড গেল।উপদেষ্টাদের গ্রুপে ৪ জন ছিলেন। লাল পন্থী দুজন , দহরম খান এবং মহরম খান , আর নীল পন্থী দুজন , আতা চৌধুরী এবং ডালিম চৌধুরী

এর মধ্যে দহরম এবং মহরম নিজেদেরকে আধুনিক , বিজ্ঞানমনষ্ক বলে পরিচয় দেন। অন্যদিকে আতা এবং ডালিম এরা দুজন নিজেদেরকে উদার এবং মধ্যপন্থী বলে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন।
ঘোড়ায় টানা গাড়িতে করে তাদের যাত্রা শুরু হল।

দহরম গাইডকে বললেন"তোমার ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে বলো তো।"
"স্যার মহারাজ আমাকে পাঠিয়েছেন রাজ্যের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়েআপনাদের যদি কিছু জানতে ইচ্ছে হয় তাহলে তার তথ্য পরিসংখ্যান দেয়ার জন্য।"
দহরম বললেন "পরিসংখ্যান!তাহলে আমরা সংক্ষেপে তোমাকে পরি বলে ডাকতে পারি?!"
গাইড একটু অবাক হয়ে গেল। মহরম হেসে দিলেন।
আতা বললেন "আপনে মিয়া সব জায়গায় ফান ঢুকান। বাস্তব জীবনেও রম্য নিয়া আসেন।"
"এই জীবন তো আর কিছু নয় রম্য মঞ্চ !" হাহা বলে দুলে দুলে হাসতে থাকেন ।
দহরম চুল দাঁড়ি কাটেন না , তার বিশাল লম্বা চুল এবং দাঁড়ি। হাসির সময় তার চুল দাঁড়িও নড়তে থাকে।
"হাসেন হাসেন।" ডালিম উত্তর দেন ।
মহরম বললেন "দহরমের শেষ লেখাটা খুব লেগেছিলো বুঝি!"
আতা বললেন "লাগবে না মানে! আপনে ধর্মের মত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নিয়ে ভ্যাঙান। রম্য করেন! "
"রম্য আর কৈ করলাম! এখনো শুরুই করি নি! তবে শেষ লেখাটা লিখে ব্যাপক মজা পেয়েছি!আলোচনাটা ব্যাপক জমেছিলো!  এই সব আলোচনায় ব্যাপক মজা পাই! বিশেষ করে ধর্মের মধ্যে বিভিন্ন ভাগ নিয়ে! ধর্ম যারা মানে, এদের মধ্যে যে কত ভাগ! সেই সব ধর্মের মধ্যেও উপভাগ! আপনাদের ধর্মের মধ্যেও উপভাগ আছে!!যেমন ধরুন শোয়া আর শোন নি!" এই বলে খ্যাক খ্যাক করে হাসতে থাকেন ।
আতা রাগে ফুসতে থাকেন।
ডালিম বলেন "আপনাদের নাস্তিকদের মধ্যেও তো অনেক ভাগ আছে। একদল অজ্ঞেয়বাদী আরেকদল অবিশ্বাসী!"
মহরম বলা শুরু করেন "আরে!আমাদের মধ্যে ভাগ থাকলেও তো আমরা যুক্তির অনুসারী , বিজ্ঞানের ছায়ায় আছি।"
আতাও মুখ খোলেন ...
তাদের যুক্তি-পালটা যুক্তি চলতে থাকে।
টমটমও চলতে থাকে।


যুক্তিতর্কের এক পর্যায়ে মহরম গাইডকে জিজ্ঞেস করেন "পরিভাই আমাদের অন্যপাতার (উপদেষ্টাদের লেখার পাতা, মূলত বুদ্ধিজীবীদের পড়ার পত্রিকা ) শেষ সপ্তাহের পরিসংখ্যান দিন তো। বলেন তো কোন বিষয় নিয়ে কত পাতা লেখা হয়েছে ।"
গাইড পরিভাই নাম শুনে একটু মর্মাহত হলেও বলা শুরু করল "অবিশ্বাস নিয়ে ৭ পৃষ্ঠা ,বিশ্বাস নিয়ে ৮ পৃষ্ঠা ,শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অর্ধ পৃষ্ঠা , বিজলি সমস্যা নিয়ে ১ পাতা, ফ্যাশন নিয়ে ৩ পৃষ্ঠা , মঞ্চ নাটক নিয়ে ২ , দুস্থ শিশু নিয়ে এক প্যারা ,পথ শিশুদের নিয়ে এক প্যারা , ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের নিয়ে এক প্যারা ...
মহরম থামিয়ে দেন "থাক আর লাগবে না আমরা বিশ্বাসীদেরকে প্রায় হারিয়েই দিচ্ছি! আর বেশি দিন নেই! বেশিরভাগ পাতাই আমাদের লেখা দিয়ে ভরবে!"
ডালিম বললেন "আপনি থামাইলেন কোন জায়গায়?!ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের নিয়ে মাত্র এক প্যারা লেখা হইছে , আর অবিশ্বাস নিয়ে ৭ পাতা! কী দরকার কন তো দেখি ? কোনটা বেশি দরকার মানুষ নাকি বিশ্বাস অবিশ্বাস? ..."
দহরম "আহা!আপনি তো দেখি বেশ জনদরদি হয়া গেলেন! নিজেদের বিশ্বাসপাতা থেকে যদি একটা পাতা দান করতেন তাইলে বুঝতাম... আপনে পারলে বলেন তো আয়হায় ঘুর্ণিঝড়ে কত লোক ক্ষতিগ্রস্থ হইছে এর জন্য কী কী করছেন? কী কী লিখছেন?"
ডালিম প্রতি আক্রমণে থেমে যান ।
আতা এবার আক্রমণে এগিয়ে যান "পারলে আপনে বলেন দেখি !
কত জন মারা গেছে । কী কী ক্ষতি হইছে । আপনে কী কী লিখছেন? "
দহরম এবার দমে যান "ইয়ে তেমন লিখি নাই । তবে ইচ্ছা ছিলো। অজ্ঞেয়বাদ এবং অনির্ণেয়তা লেখাটা নিয়ে ব্যস্ত থাকায়... এটার জন্য অনেক গবেষণা করতে হয়েছিলো "
ডালিম উনাকে থামিয়ে গাইডকে জিজ্ঞেস করেন
"আপনি বলুন তো আয়হায় ঘূর্ণিঝড়ে এদেশের কত জন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ?
"স্যার ১ লক্ষ লোক বাড়িঘর ছাড়া হয়েছে । বিশুদ্ধ পানির অভাবে মরেছে ৩৫০০ জন। ডায়রিয়া কলেরায় মারা গেছে ৭ হাজারের ও বেশি শিশু । ঘূর্ণিঝড়ের ১ বছর পরও ওদের পুনর্বাসনের জন্য কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নাই !"
দহরম এবং মহরম চুকচুক করে বলে ওঠেন "দুঃখজনক"।
আতা এবং ডালিম বলেন "নাউজুবিল্লাহ!"
দহরম এর মন বিষাদের ভরে ছিলো আতা আর ডালিমের কথা শুনে তার আবার হাসি পেয়ে গেল ।
হঠাৎ ডালিম বললেন "আচ্ছা আমরা চলছি না কেন? টমটম থেমে আছে কেন?
"স্যার টমজ্যামে পড়ে গেছি । রাজধানীতে এইটা একটা বিশাল সমস্যা । টমজ্যামে মানুষের অনেক সময় নষ্ট হয় , অনেক রোগী হাসপাতালে নেবার আগে মারা যায়, অনেক..."
আতা বলে ওঠেন "থামো ভাই থামো! তুমি পরিসংখ্যান দিতে শুরু করলে তো দিতেই থাকো ! "
মহরম বলে ওঠেন "ও একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নিয়ে পরিসংখ্যান দিচ্ছিল আর আপনি থামিয়ে দিলেন! নাউজুবিল্লাহ ম্যান নাউজুবিল্লাহ!" দহরম অনেক জোরে হেসে ওঠেন ।
ডালিম বলেন "খুব তো একটা ভাব নিয়ে নিলেন ! বলেন দেখি কয়দিন টমজ্যাম ফেইস করছেন ?! থাকেন তো রাজপ্রাসাদের চিপায়! পাব্লিকের সমস্যা কি বুঝবেন কয়দিন এইটা নিয়ে আলোচনা করছেন । কয় পাতা লিখছেন? এইটা সমাধানের জন্য..."
মহরমও কম যান না, পালটা উত্তর দেন ।
তাদের যুক্তি পালটা যুক্তি চলতে থাকে।
টমটমও জ্যাম ঠেলে এগুতে থাকে । জ্যাম এর এক পর্যায়ে একটি হকার বলে ওঠে "স্যার লাগব দৈনিক প্রধান আলু । ৪০ পৃষ্ঠা আছে স্যার "
মহরম বলেন " খালি নামেই ৪০ পৃষ্ঠা, বিজ্ঞাপনই ৩৮ পৃষ্ঠা!জোচ্চোর পত্রিকা!"
মহরম হকারকে মানা করে দেন ।
আতা গাইডকে জিজ্ঞেস করেন "এই বয়সে এই ছেলে পড়া ছেড়ে দিয়েছে কেন?! "
গাইড বলে "স্যার এতো খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ! এ দেশের ৫ লক্ষাধিক শিশু স্কুলে যাবার সুযোগ পায় না । যারা পায় তাদের মধ্যে ৬০% ঝরে যায় প্রাথমিক লেভেল এ ! তাদের মধ্যে ৩০% ঝরে যায় হাই স্কুল শেষ করার আগে..."
মহরম বলে "বাপ্রে! পরি ভাই এর পরিসংখ্যান এর ট্রেইন চলছে তো চলছেই!"
বলেই দুলে দুলে হাসতে থাকেন । গাইড একটু লজ্জা পেয়ে যায়।
দহরম জিজ্ঞেস করেন "আচ্ছা পরিভাই শুনেছি শিশুদের অনেকে নাকি ঝুকিপূর্ণ কাজ করে । এটা কি সত্যি? "
গাইড এবার একটু ধীরে উত্তর দেয় । "জ্বি স্যার ৬ বছরের বাচ্চা ছেলেকে কেমিকেল কোম্পানীতে কাজ করতে গিয়ে পুড়ে মারা যেতে আমার চোখের সামনে দেখেছি !... হাজার হাজার শিশু খুবই ঝুকিপূর্ণ কাজ করে ... "
বিশাল লিস্ট দিতে শুরু করে সে ।

সবাই শুনে চুপ করে যায় । বিজ্ঞান ধর্ম তত্ত্ব নিয়ে নাড়া চাড়ার সময় দেশের মানুষ নিয়ে জানার সুযোগ তাদের হয় নি ।
ডালিম বলে ওঠেন "এই বিষয় নিয়ে একটা লেখা দেয়া দরকার। বিস্তারিত তথ্য তত্ত্ব ঘেঁটে ..."
দহরম বলে ওঠে "আপনার তথ্য বহুল 'কেন স্রষ্টায় বিশ্বাস করি'র মত আরেকটা? " এই বলে দুলে দুলে হেসে ওঠেন তিনি। মহরম ও যোগ দেন তার সাথে । তাদের দুজনের হাসির দমকে টমটম কাঁপতে থাকে।
আতা প্রতি আক্রমণ করেন...বুদ্ধিজীবীরা আবার তাদের তর্কে মেতে ওঠেন।
টমটম চলতে থাকে।

টমটম একটি নতুন শহরে প্রবেশ করে। মহরম বলেন "এটা বাজিপুর না?"
গাইড বলেন "জ্বি স্যার।"
"হেহে! আমি চিনি! পতিতাদের শহর নামে পরিচিত এটা। আমি একট উপন্যাস ও লিখেছিলাম এটা নিয়ে। "
আতা বলে ওঠেন "সেই বইটা না যেটা অশ্লীলতার দায়ে ব্যাপক সমালোচিত হয়?"
দহরম বলেন "চুপ থাকেন মিয়া! শ্লীল অশ্লীল বলে কিছু নাই, সাহিত্য হচ্ছে সাহিত্য।"
ডালিম বলেন "বুঝছি বুঝছি! পতিতাদের অধিকারের নামে তাদের শরীরের অহেতুক বিস্তারিত বর্ণনা , কাস্টমারদের সাথে অশ্লীল আলাপ, শারীরিক ক্রিয়ার বর্ণনা এই সবই তো আপনার সাহিত্য!উলটা পালটা বাদ দিয়া দরকারি অংশ লিখতে পারেন না?"
"কোনটা দরকার আর কোনটা অদরকার এইটা আপনার কাছ থেকে
বুঝতে হবে নাকি? মেয়েদের অন্ধকারের মধ্যে রাখেন ,চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি রাখেন আবার বড় বড় কথা!"
আতা বলেন "আসল টপিক থেকে দূরে সরে যান কেন?!"
দহরম বলেন"আসল টপিক মানে? নারী হচ্ছে আসল টপিক এইখানে ।সেক্স ওয়ার্কাররাও নারী । বই এর সেক্স এর পার্টটাই নজরে আসল, ওদের যে সমস্যা তুলে ধরা হইল ঐটা নিয়া কথা নাই কেন? আসল জিনিস নিয়া কথা নাই...খালি সেক্স নিয়ে কথা বলেন! "
৪ জন পুরুষ, নারী/নারীমুক্তি নিয়ে তর্ক করতে থাকেন ,শ্লীল অশ্লীল নিয়ে তর্ক করতে থাকেন। রাস্তায় পথশিশুরা আবর্জনার স্তুপ থেকে খাবার তুলে খাচ্ছিলো । এই দৃশ্য শ্লীল নাকি অশ্লীল কারো মনে প্রশ্ন জাগে না। চোখেও পড়ে না!


টমটম চলতে থাকে। ...
হঠাৎ পথে ছোপ ছোপ রক্ত দেখে দহরম জানতে চান "এইগুলা কী?"
আতা বলেন "রক্ত দেখেও বোঝেন না নাকি?! সব কিছুতেই সংশয় থাকলে তো বিপদ!"
প্রথমবারের মত আতা এবং ডালিম হেসে ওঠেন।
মহরম বলেন "কীভাবে হল?"
"স্যার পোশাক শ্রমিকদের সাথে ওদের মালিকদের বেতন নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে।শ্রমিকদের মধ্যে ৯৫%-ই নারী। ওদের বেতন স্যার জীবন চালানোর মত না ! এত কম টাকা দিয়ে ওরা যে কীভাবে জীবন চালায়! বেতন বৃদ্ধি নিয়ে ওরা আন্দোলন করে। মিছিল করলে পুলিশ আক্রমণ করে ফলে অনেকে মারা যায়। অনেকে আহত হয়... "
লালপন্থী দহরম বলেন " কালপরশু এক্সামমার্ক্স শ্রমিকদের এই জেগে ওঠা নিয়ে... "
নীলপন্থী আতা এই সময়ে চুপ থাকতে পারেন না! আতাও তার স্বভাবসুলভ কালপরশুর বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন...
বিতর্ক চলতে থাকে ।
পথের রক্ত থেকে তারা বইয়ের মধ্যে ঢুকে পড়েন , তত্ত্ব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন।
শ্রমিকদের রক্ত রোদে পুড়ে কালো হতে থাকে । শ্রমিকের ঘামের মূল্য কম হলেও আছে, রক্তের মূল্য নেই।
টমটম রক্তভেজা পথ পেরিয়ে যায় ...তখনকার মত।
গাইড ভাবতে থাকে "ঈশ্বর আছেন অথবা নেই। ঈশ্বর এই সব কথোপকথন শোনেন অথবা শোনেন না। কিন্তু পিছিয়ে পড়া, অবহেলিত মানুষ আছে, ওদের কষ্টও আছে কিন্ত ওদেরকে এই সব উঁচু তালার মানুষদের কথা শোনার কষ্টটুকু সহ্য করতে হয় না!ভাগ্যিস! "

উৎসর্গ : সোহায়লাপু , আপু তুমি এত্ত ভালো কেন?

No comments: