Wednesday, February 10, 2010

পাঠ প্রতিক্রিয়া : "কাঠের সেনাপতি"


ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের ৬ টি গল্প নিয়ে কাঠের সেনাপতি । লেখক তারেক নূরুল হাসান । গল্পগুলো ১৯৯৭ থেকে ২০১০ এর জানুয়ারি বিভিন্ন সময়ে রচিত ।
চমৎকার প্রচ্ছদটি করেছেন নজরুল ইসলাম ।

বোদ্ধা বা লেখক হিসেবে নয় (আমি তা নই ও) , পাঠক হিসেবে বইটি পড়ার পর আমার প্রতিক্রিয়া ।
সমান্তরাল (২০০৬) 
গল্পটি বেশ লেগেছে । ছোট ছোট অনুচ্ছেদে ভাগ করে একটু একটু করে গল্প বলা। সময়ের নদীতে অদ্ভুদ সুন্দর সন্তরণ । প্রথম সিগারেট খাওয়া, মায়ের আদুরে কথা, গভীর চোখের বর্ণনা,প্রেমিকার উষ্ণ বুকে হাত রাখার কথা,বাবার অজানা কথা ,আবার বর্তমানে ফিরে আসা । গল্পটি ভালবাসার থেকে বেশি ঘৃণার, অথবা তার থেকে বেশি ঘৃণা করার ব্যর্থ চেষ্টার ! প্রতিটি অনুচ্ছেদই যেন একেকটি গল্প!
বউ (জানুয়ারি, ২০১০)
সাম্প্রতিকতম গল্প । একজন নিঃসঙ্গ,আটপৌরে মানুষের কথা। নাম মনজুর । একজন ব্যর্থ প্রেমিক । এখন গোপন কিন্তু গভীর প্রেমে ডুবে আছে রুমা নামের আরেকটি মেয়ের । সেই প্রেমের কথা কাউকে বলে না সে । নিয়মিত বিয়ে করার অথবা পাত্রী দেখার চাপ আসে কলিগ/কাছের লোকদের কাছ থেকে । এড়িয়ে যায় সযতনে । নতুন এই প্রেমকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায় , যে কোন উপায়েই , কারণ এর আগে তার হাত ছাড়া হয়েছিল এক জীবনের ভালবাসা। নতুন প্রেমিকা যেন অতীতের আয়না ।
শেষটা বেশি ভাল লেগেছে ।
কাঠের সেনাপতি (মার্চ ২০০৯ )
শুধু একটি প্যারা তুলে দেই । খুব ,খুব ভাল লেগেছে আমার।

পড়তে পড়তে ,কোন একদিন ,সম্ভবত সেদিন ছাতিমের গন্ধ আবার ও ভুল করে ঢুকে পড়েছিলো ওদের ঘরে ,দুয়েকটা চড়ুইয়ের ডানায় চেপে ।
আর রাশেদ সেদিন,ওর আশেপাশে চড়ুইয়ের মতই উড়তে থাকা অনেকগুলোওলোট পালোট শব্দকে ধরে ধরে খাতায় বসিয়ে দিয়েছিলো । বিকেল হলে, আব্বা যখন বাড়ি ফিরে,রাশেদ ভীষণ সংকোচে সেই
সার-বাঁধা চড়ুইগুলো নিয়ে আব্বার সামনে হাজির হয় , আর আব্বা
সেদিকে এক পলক তাকিয়েই বলে ওঠে ,'ওরে বাবা,
কি সর্বনাশ ,তুই কবিতা লিখে ফেলেছিস!'

গল্পটার পরতে পরতে এমন সুন্দর সব বাক্য । অন্য এক যুদ্ধের বর্ণনা !
ইঁদুর (মার্চ ২০০৮)
আমাদের মুখোশ খুলে দেবার গল্প । আমাদের যাপিত জীবনের নোংরা দিকের গল্প। কিছু গল্প আছে ,যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়,আমাদের ভেতরে কি বসবাস করে । উত্তম চরিত্রে লেখা গল্পটি সমান্তরালে দুটি ঘটনা উপস্থাপন করে দেখিয়ে দিল মানুষের ভেতরের আঁধারকে।
নিমন্ত্রণ (এপ্রিল ১৯৯৭ )
গল্পটা ভিন্ন স্বাদের । কিছুই বলব না,কিছুই না!
পড়েই বুঝে নিতে হবে! তবে ভাল লাগবে এটা বলতে পারি!
শব্দশিল্পী (মার্চ ২০০৭)
বইটির সবচেয়ে লম্বা গল্প । কিন্তু শেষ করার পর মনে হবে আরেকটু বড় হলে ভাল হত!উত্তম চরিত্রে লেখা। ধীরলয়ে গল্পকথকের চরিত্র বিনির্মিত হয়েছে । গল্পটি গড়পরতা চাকরি খোঁজার নয়,কোন রূপবতীর পাশে বসে থাকার ইচ্ছে নিয়ে নয় । আটপৌরে দিনের বাইরের গল্প! অদ্ভুদ এক দক্ষতা সঠিক ভাবে কাজে লাগিয়ে এক দেশ বিরোধী লোককে সাজা দেবার গল্প!
লেখক সাহিত্যের পাতায় কত দিন থাকবেন জানি না , পরের বইটি অটোগ্রাফ সহ নেব এটা নিশ্চিত!
মাহবুব আজাদ (হিমু ভাই ), ফ্ল্যাপে লিখেছেন ,স্বভাবসুলভ গোছালো ভাবে "দৃষ্টি আকর্ষণী উন্মত্ত চিৎকার নেই ,আপন ঢোল ভেবে যথেচ্ছ বাদন বিভ্রাট নেই , তাঁর গল্প গুলি যেন সন্ধ্যায় পাঠকের দোরে কোমল করাঘাত করে ডাকে 'বাড়ি আছো?'
ঠ্যাংনোটঃ
*আমার মনে হয় রিভিউ/প্রতিক্রিয়া পড়া উচিত ,পড়া/দেখার পর! অন্য আলোতে দেখার জন্য,নিজের ভাবনা/প্রতিক্রিয়া অন্য (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয় বোদ্ধা শ্রেণীর কেউ) কারো সাথে মিলিয়ে নেবার জন্য । গল্পের ধরণ বলে দিলেই হয়ত পাঠক আগে থেকেই একটা ভাবনা/প্রত্যাশা নিয়ে বসে থাকবেন । যা হয়ত পরে পুরো না হলেও কিছু আনন্দ মাটি করে দেবে ।
*অন্য কারো রিভিউ পড়ব, অন্য আলোতে দেখব এই বইটিকে ,সেই অপেক্ষায় ।
*ফ্ল্যাপে লেখক নিজের সম্পর্কে তেমন কিছু লেখেন নি, প্রচারবিমুখতা ভাল লাগে নাই! ভাল ভাল লেখা ছড়িয়ে দিতে, প্রচারমুখী হওয়া জরুরি বলেই মনে করি ।

1 comment:

Anonymous said...

When will you post again ? Been looking forward to this !