Thursday, April 1, 2010

স্বপ্নের সাথে হাঁটা, স্বপ্নের জন্য হাঁটা

হাঁটাহাঁটি আমার সেই রকম প্রিয় ।
হাঁটতে হাঁটতেই স্বপ্নের সাথে হাঁটা স্বপ্নের জন্য হাঁটা,কথাটা পেয়েছিলাম ,(হায়রে চন্দ্রবিন্দু! এত জালায়! লিখতে অনেক কষ্ট হয়, চন্দ্রবিন্দু না থাকলে ভূতরা আত্মহত্যা করত হয়তবা কিন্তু আমাগো তো ব্রাট সুবিধা হইত! শফিক রেহমান তো খুশিতে একখান লাল গোলাপ নিয়া... ) ।

হাঁটাহাঁটি করতে ছোটবেলা থেকেই ভালো লাগত । ছোট থাকতে বাসায় রাগারাগি করলেই বেরিয়ে যেতাম ,প্ল্যান থাকত একদম হারিয়ে যাব (আমার সাথে রাগারাগি হাহ?! )কিন্তু কপাল খারাপ (অথবা ভালো!) কখনোই হারানো হয় নাই । প্রতিবার লেজ গুটিয়ে ফিরে এসেছি, এর মধ্যে বাসার সবাই চারিদিকে খোঁজখবর নেয়া শুরু করে দিয়েছে । ফিরে আসার পর আবার এক চোট রাগারাগি (প্রায়ঃশই মাইর!)তবে বাসায় আসতাম অন্য রূপে, জুতো/পা'তে ধূলো তো ছিলই ,সাথে মগজেও ধূলো জমত । একলা হাঁটাহাঁটি মানেই চিন্তার সুযোগ । সেই সময়ের চিন্তা ছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী ছেলে আমি...ক্যান যে আল্লাহ দুনিয়ায় পাঠাইলো ...পাঠাইতই যদি অন্য ভালো ফ্যামিলিতে ক্যান পাঠাইলো না ...
শূণ্য.
এখনকার হাঁটাহাঁটির একটা কারণ আছে,ভুঁড়ি নিয়ে টেনশান , সিক্স প্যাক তো এই জনমে হবে না, তাই বলে ওয়ান প্যাকটাকে একটু বেঁধে ছেঁদে রাখবো না? বিয়ে (কপালে থাকলে!) তো করতে হবে?
আরেকটা কারণ আছে, শারীরিক সুস্থতার জন্য । ঐতিহ্যগত ডায়াবেটিস যাতে না হয়!
সুস্থতার জন্য নিয়মিত হাঁটতে থাকি , ভাবতে থাকি যতদিন বেঁচে থাকিব সুস্থ থাকিবার জন্য হাঁটিতে থাকিব ।
এক. 
হাঁটার সময় অনেক কিছু নিয়ে চিন্তা করতে পারি । গান শুনতে থাকি,
চিন্তা করতে থাকি । কত কিছু নিয়ে যে ভাবি!
ভাবনার বিষয়বস্তু সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় । ৩ বছরের কিছু বেশি সময় ধরে নিয়মিত হাঁটছি । এই সময়ে ভাবনার বিষয়বস্তুতে অনেক পরিবর্তন এসেছে । উদাহরণ দিয়ে বুঝাই ১ম বর্ষে যখন ছিলাম তখন ভাবনা ছিল নিজের ডিপার্টমেণ্ট এর কোন মেয়ে তো আগ্রহী হইলো না , এইবার অন্য ডিপার্টমেণ্টদের নিয়ে ভাবি! তারপরের বছর দেখলাম তারাও বেইল দেয় না ... তখন ভাবলাম অন্য ইউনির মেয়েদের নিয়ে ...তারপরের বছর জুনিয়রদের নিয়ে ...! ৪র্থ বর্ষের মাঝামাঝি এসে ক্যারিয়ারের কথা ভাবতে হচ্ছে । ফটোগ্রাফিতে আগ্রহী হবার পর অনেক সময় ভেবেছি ছবি তোলা নিয়ে । আলাদা কিছু তোলা যায় কিনা ...এই সব হাবি জাবি আর কি!
অণুকাব্যে বিশাল আগ্রহ ছিল, সেই সব পোস্ট করলে ফেইসবুকে বন্ধুদের অনেক লাইক পেতাম ,তাই ভাবতাম এই গুলা নিয়ে ।
অর্ধজীবন পার করেছি হিসেব নিকেশ কাল গুনে
তবু এবার রাখছি আশা পাব তাকে ফাল্গুনে!! 
এই টাইপ অণুকাব্যগুলো হণ্টন এর সময়ই লিখেছি । ( আরো অণুকাব্য পাবেন এইখানে )
আমি আবার দ্রুত বদলাই । চিন্তায়,ভাবনায়, বোধে, যুক্তিতে ...
একটু একটু করে বদলাচ্ছি ।
কতটুকু ভাল'র দিকে?
হাঁটতে হাঁটতে সেটা নিয়েও ভাবি ...ভাবতে ভাবতে হাঁটতে থাকি ।
h.jpg
দুই. 
হাঁটতে হাঁটতে মানুষ দেখি,রাস্তা দেখি ,বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপন গাড়ি দেখি আর দেখি আকাশ ।
শাহরিক অমানবিক ব্যস্ততায়, অতিমানবীয় ক্ষিপ্রতায় ছুটে চলা মানুষগুলোকে ট্রাফিক জ্যামের নিশ্ছিদ্র জালে আটকে থাকতে দেখি ।
আমার কাছে ঢাকার সবচেয়ে ঘৃণ্য জিনিস এই জ্যাম । কত সময় যে নষ্ট হয় আমাদের, নিয়তি ভেবে মেনেই চলেছি ,জ্যামে বসে সবাই ঝিমুতে থাকি। সেই সব আটকে পড়া, হাপিয়ে ওঠা মানুষ মাঝে মাঝে দেখি , এদের স্বপ্ন নিয়ে ভাবতে থাকি । আটকে পড়া নিরুপায় সব মানুষকে তখন এক কাতারে দাঁড়ানো দেখি আর ভাবতে থাকি ... আর হাঁটতে থাকি...
তিন.
হাঁটতে হাঁটতে মাঝে মাঝে রূপবতীদেরও দেখি । একেক জনকে একেক রকম লাগে ! কেউ কবিতার মত, কেউ প্রবন্ধের মত, কেউ বা গল্পের মত ।
(রিয়েল লাইফে) মিশতে গেলে কাউকে কাউকে উত্তরাধুনিক ব্লগ পোস্টের মতও লাগে!ভেতরটা ছেড়ে কিছু সময়ের জন্য তাই কবিতার মত (সোজা কথায় রূপবতীদের) মেয়েদের আড়চোখে দু একবার দেখে নেই ।
আবার হাঁটি ।
আল্লাহ ই জানে কপালে কী শেষ পর্যন্ত উত্তরাধুনিক ব্লগ পোস্ট মার্কা বালিকাআছে নাকি?!! এই সব ভাবতে থাকি । আর হাঁটতে থাকি ।
চার
মাঝে মাঝে ভাবি , সারা রাত হাঁটব , হাঁটতে হাঁটতে সকাল দেখব । এই সকাল দেখার হন্টনটাও আমার
স্বপ্ন গুলোর একটা । হয়ত সামান্য, হয়ত সাধ্যের মধ্যে । হাঁটি আর ভাবি খুব শীঘ্রই কোন একদিন সন্ত্রাসীদের ভয় না করে মোবাইলটা সাথে নিয়ে গান শুনতে থাকব আর হাঁটতে থাকব । এই সব স্বপ্ন নিয়ে আমি হাঁটতে থাকি ।
পাচ.
আমি হাঁটি ধানমন্ডি লেইকে আর সাত মসজিদ রোডটায় ।
এই রোডে ফাস্ট ফুড আর রেস্টুরেণ্টের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে । পত্রিকায় দেখেছিলাম সামনে আরো বাড়বে (ফাইভ স্টার হোটেল এর সংখ্যাও বাড়বে দেশে) ।দেশে পৃথিবীর ১৩ তম বৃহত্তম মার্কেট হচ্ছে,আমরা হয়ত এগিয়ে যাচ্ছি সাজ সজ্জায় , শপিং এ ,খাওয়ায় ।
পেছাচ্ছি কোন দিক দিয়ে?
ভাবতে থাকি আর হাঁটতে থাকি...
ছয়.
বিলবোর্ড মাথায় ভেঙে পড়ে নাই এখনো ,সড়ক হত্যাকান্ডে মরি নি , র‌্যাব এখনো ক্রসফায়ারে নেয় নি, কোন সহপাঠী বাসায় এসে ছুরি মারে নি, ছাত্রলীগের চক্ষুশূল হই নি, স্মৃতিভ্রষ্ট হই নি ...সুস্থ শরীরে হেঁটে যাচ্ছি ।
ভাবতে থাকি আমি ভাগ্যবানদের একজন । এখনো বেঁচে আছি ।
ভাবতে থাকি আর হাঁটতে থাকি... শরীরে অদ্ভূদ সুন্দর বাতাস হাত বুলিয়ে দেয় ।কী যে ভালো লাগে ! স্বপ্নের সাথে আমি হেঁটে যেতে থাকি ।
শেষ
বাসার কাছে চলে আসি, ঘড়িতে রাত  ৯ টার কিছু বেশি । এখনো লোডশেডিং । ছোট বোনটার ইণ্টার মিডিয়েট পরীক্ষা। পড়ছে কিভাবে কে জানে! দুই ঘণ্টা শেষ হয় নি । 
আজকে খবরে দেখলাম শেখ হাসিনা পুরষ্কার পেয়েছেন , ASOCIO IT AWARD ।
বাংলাদেশের আইটিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য... । আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ । তীব্র গরমের মধ্যেও এই সব ভালো খবরগুলো আমাদের শরীরে শীতল হাওয়ার মত ... !!!
আমি বাসায় ফিরি না, আবার হাঁটতে চলে যাই ।
হাঁটতে থাকি... গান শুনতে থাকি আর ভাবতে থাকি। স্বপ্নের কথা , আমার কথা, আমাদের কথা, আজকের কথা, আগামীর কথা...

7 comments:

তন্মা said...

হন্টন খুবই পছন্দ।প্রায়ই হাঁটা হয়।এই ছবিটা বড়ই সৌন্দর্য!!!!!!

বোহেমিয়ান said...

থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু তন্মা ।
এই ছবিটা আমার ফটোগ্রাফির শুরুর দিকের, তাই নিজেরো প্রিয় ।

হাসিব said...

সাইটটা বেশ নান্দনিক চেহারার । আমার সাইটের ব্লগরোলে যোগ করে নিলাম ।

Aero River said...

ভালো লিখেছেন। তন্ময় হয়ে এতক্ষণ পড়ছিলাম।

বোহেমিয়ান said...

@হাসিব ভাই গর্বিত হইলাম ।

@aero river অনেক ধন্যবাদ ।
ভালো থাকুন

Aero River said...

"বাংলা হ্যাকস" ব্লগে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। আপনি কোন জায়গায় কোড বসিয়ে সফলতা পেয়েছেন, তা আমার ব্লগে স্পষ্ট হয়নি। তবে, আপনার ব্লগটি নতুন ডিজাইনে করা তাই হয়তো আমার উল্লেখ করা জায়গায় না বসিয়ে ভিন্ন জায়গায় কোড বসাতে হয়েছে। যা হোক, সামান্য হলেও অন্তত: ধারনা দিয়ে আপনার উপকার করতে পেরেছি, এই জন্য আমি আনন্দিত।
ভালো থাকুন, আর এই পোস্টটির মত আরও উচুমানের লেখা লিখুন- এই প্রত্যাশা করি।

বোহেমিয়ান said...

ধন্যবাদ ।
আপনার পোস্ট থেকেই আইডিয়া পেয়েছি